পূর্ণতা এক অলীক স্বপ্ন মাত্র!

প্রকৃতি বোধহয় আমাদের সবচেয়ে বড় শিক্ষক। প্রকৃতি বিভিন্ন ভাবে আমাদেরকে শেখায়। তার নানা অনুষঙ্গ, উপকরণের মাধ্যমে আমরা শিখি। মনুষ্য সৃষ্টির সবকিছুই প্রকৃতি থেকে শেখা। প্রকৃতির প্রাণীকূল, উদ্ভিদকূল,জড়বস্তু,অবস্তুগত সমস্ত কিছু আমাদেরকে এই জিনিস শিখাচ্ছে ; পূর্ণতা একটা অলীক স্বপ্ন। অবস্তুগত শব্দ ছাড়া কিছু নয়। পূর্ণতা বলে কিছুই হয় না। আপাত দৃষ্টিতে যা পূর্ণ মনে হয় আসলে তার অলিন্দে থাকে শূন্যতা। দৃষ্টি প্রসারিত করলে সব পরিষ্কার হয়ে যায়। সাময়িক সব কিছু সুন্দর মনে হয়। কিন্তু একটা প্রাণী, একটা উদ্ভিদের সমস্ত জীবনকাল পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ; সে বিভিন্ন সংঘাত, প্রতিঘাত, নিজ সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে অবিরত সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। অবশ্য পূর্ণতা মনুষ্য চিন্তার অগোচরে তার ভাবনায় আসে। উদ্ভিদকুল বা প্রাণীকূলের পূর্ণতা নামক সাফল্য তাকে স্পর্শ করে না। কারণ তারা তো দান করতে আসছে। তাদের কর্ম দিয়ে, জীবন দিয়ে। দানের সুখ,তৃপ্তি এটা ঠুনকো এক ভাবনা । স্বার্থপর সম্প্রদায় বা অন্যভাবে বললে মানুষের মত এই সুখ,তৃপ্তি,দুঃখ, বেদনা, হতাশা, আকাঙ্ক্ষা তাদের থাকেনা। উদ্দেশ্য যেখানে আনন্দ দান করা;সে তার কর্ম বা জীবন দিয়ে সেটা করে যায়। পরিতৃপ্তি বা বিপরীত দানের প্রত্যাশা যেখানে থাকে না;সেখানেই তো মুক্তি,আনন্দের ঝরনাধারা র অপার অবকাশ। সেখানেই তো জয়। আত্মার পূর্ণতা একেই বলে।তাইকি বোঝাতে চেয়েছেন প্রকৃতি নামক অভিভাবক ...... তাই বলা যায় আগমনের উদ্দেশ্য যা তা পরিপূর্ণভাবে উদ্ভিদ কূল এবং প্রাণীকুলের ভেতর দেখা যায়। কর্মের ফলাবর্তন চাওয়া নিম্নস্তরের চিন্তা। বলতে গেলে পূর্নতা তাদের ভিতরেই থাকে।
প্রকৃতির বড় একটা সম্প্রদায় এ মনুষ্য সমাজের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই পূর্ণতা নামক বিকারের প্রতিযোগিতা। বলুন তো কিসের পূর্ণতা! কেন এই ভাবনার উদ্রেগ? এই শব্দটা অবাস্তব দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়। মানুষের বরং চাওয়া উচিত আনন্দ,পরমানন্দকে পাওয়া। ভালো মানুষ কি পূর্নতাকে চায়, না চাইতে পারে? সে তো বটবৃক্ষের মত বড় ও উদর। তাকে কে তৃপ্ত করতে পারে? বা তাঁকে গ্রহন করার বা কেনার ক্ষমতা আছে? সে তার দুঃখ ,অতৃপ্তির কথা কাউকে বলে! সৎ মানুষ এমন। পূর্নতা নামক অসুখ থেকে মুক্ত।কালকের সূর্য তার জীবনে কি বয়ে আনবে এই চিন্তায় বিভোর না হওয়া, এটাই তার চরিত্র বা বৈশিষ্ট্য সময়কে নষ্ট না করা । বরং কোন কিছু না ভেবে অবিরত কর্ম করে যাওয়াই তার লক্ষ্য হওয়া উচিত। আর সৎকর্ম তাকে ভালো এবং আনন্দায়ক ফল দিবে এটাই ভবিতব্য। আর জ্ঞানের পূর্ণ বিকাশ যেখানে ঘটবে সেটা পূর্ণ হবে ভালোর আলোয়। সেটাই আশ্চর্য বা অন্যভাবে বললে হিংসার কারন অপরের কাছে। তার নিরন্তন এই সাফল্য তাকে সাময়িক পূর্ণতার তৃপ্তি দিলেও সে পরিপূর্ণ নয়। আমরা নিজেরাই ভেবে নিই অপরকে দেখে। সে পরিতৃপ্ত,পূর্ণ মানুষ, সুখী মানুষ। পূর্ণতা হয়না। পূর্ণতা আমাদের কল্পনা মাত্র। আমরা আমাদের ব্যক্তি জীবনে, আমরা আমাদের অর্ধেকের কাছ থেকে ঠিক আমার নিজের মত চাওয়া বা প্রাপ্তি আশা করি; সমান দুই অংশ এক হয়ে সম্পূর্ণ হবে ভাবি। কিন্তু প্রকৃতি তো একের থেকে অপরকে ভিন্ন করেছে। অর্ধেক অর্ধেক মিলে সম্পূর্ন্ন হলেও তা পরিপূর্ণ বা সম্পূর্ণতার প্রতিনিধিত্ব করেনা। বরং হতে পারে সম চিন্তা একটি বিন্দুতে মিলিত হলে সম্পূর্ণ নতুন এর সৃষ্টি হয়। তাকেই যদি আমরা পূর্ণতা বলি- আক্ষরিক অর্থে হয়তো সেটা পূর্ণতা। কিন্তু অন্য অর্থে পূর্ণতা হলো পরমেশ্বর। সৃষ্টির মধ্যে পূর্ণতা প্রাপ্ত হলে সে ঈশ্বরকে প্রাপ্ত করে। তখন তার অস্তিত্ব ত্রিভুবনে থাকে না। তা ইন্দ্রাতীত। যেটা সম্ভব নয়। জগতে যার অস্তিত্ব আছে সে ওই পূর্ণতার দিকে ছুটছে। মানে সে অপূর্ণ। …………………তাই আমার বিশ্বাস বা একান্ত মত আমরা সবাই পূর্ণতার দিকে ছুটছি মানে আমরা অপূর্ণ।

No comments

Theme images by konradlew. Powered by Blogger.